বাংলাদেশ স্বর্ণযুগের এক নক্ষত্র কিংবদন্তী পথিকৃৎ আলোকচিত্রীর পতন হল! আমি গভীর ভাবে শোকাহত এমন একজন মানুষের প্রয়াণে যিনি ছিলেন আমার পথদ্রষ্টা, দিকনির্দেশক, পৃষ্ঠপোষক কর্মসংস্থানের অগ্রদূত, গুরুতুল্য শিক্ষক ও অবিভাবক। বিংশ শতাব্দীর সত্তুর দশকের মাঝামাঝিতে তাঁর সংস্পর্শে আসতে পেরে সমৃদ্ধ হয়ে ধন্য হয়েছি।
প্রায় দীর্ঘ সাত বছর পদ্মা পির্ন্টার্স এন্ড কালার লিঃ চাকুরী করেছিলাম তাঁর একান্ত সান্নিধ্য ও অধীনে। তারপরও আশির দশক, নব্বই দশক পরবর্তী একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক পর্যন্ত কাজ করে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পেরেছিলাম তাঁরই অনুপ্রেয়ণায় ও সহায়তায়। আন্তরিকতায় তিনি আমাকে স্নেহ ভালোবাসায় ঋদ্ধ করেছেন।
বিশিষ্ট শিল্পপতি খ্যাতিমান আলোকচিত্রী খান মোঃ আমীর (বিল্টু সাহেব) গত ১৭ মার্চ ২০২৫খ্রীঃ সোমবার ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে মহাকালের যাত্রায় অসীম প্রান্তরে অবস্থান নিয়েছেন অমোঘ নিয়মে। তাঁর বিদেঁহী আাত্মার শান্তি কামনা সহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি অন্তরের অন্তর স্থল থেকে!
বিশেষতঃ মূদ্রন শিল্পের ব্যবহারিক কাজের গুনগত মানের কথা বিবেচনা করেই আলোকচিত্র শিল্পের কারিগরি মানের গুরুত্ব বিচারে কোন আপোষ না করে ছবি তুলতেন যতক্ষন আশানুরূপ ফল ও সন্তুষ্টি না পেতেন। বড় ফরমেটের রঙ্গিন ট্রান্সপারন্সী ফিল্মেই তিনি ছবি তুলতেই বেশী পছন্দ করতেন। অসাধারণ ল্যান্ডস্ক্যাপে তার অনেক প্রমাণ আছে যে সমস্ত ছবিগুলো বিভিন্ন প্রকাশনা সহ বাণিজ্যিক মাধ্যমে প্রচার প্রসারে ব্যবহার হয়েছে সফলতার সাথে। অপ্রকাশিত উল্লেখযোগ্য অসংখ্য ছবি আছে যে সব দিয়ে এ্যালবাম প্রকাশ করার উদ্দ্যোগ ও প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ছাপা হয় নাই নানা কারনে শুধু “রেইন এন্ড রিভার” বাদে এজন্য যে তাঁর সন্তুষ্টি একশত ভাগ না হওয়া পর্যন্ত তিনি তা স্থগিত করে আবার নতুন করে কাজ করতেন। মন মত না হলে আবার স্থগিত! এভাবেই কাজ ধীর গতিতে চলে শেষ হয়েও শেষ করা আর হয়ত হয় নাই!
বিদেশ থেকে রঙ্গিন ছবি প্রসেস্ করে আনতে অনেক সময় ও অসুবিধার কথা বিবেচনা করে সত্তুর দশকের শেষ অধ্যায়ে জাপান ফুজি কালার ফিল্ম কোংঃ কারিগরি সহায়তায় ঢাকাতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন কালার ফটো প্রসেসিং ল্যাবঃ – “কালার প্রসেস লিঃ ” যার সফলতা পেয়েছিলেন এদেশের আলোকচিত্র প্রেমিক সর্বস্তরের জনসাধারণ।
মূদ্রনশিল্পের সাথে আলোকচিত্রের যুগলবন্দী ব্যবহারিক নান্দনিকতায় তার মত এমন পেশাদার কারিগর আলোকচিত্রীর জুরি তেমন আর কেও আছে বলে আমার মনে হয় না। সংক্ষেপে এর বেশি আর কিছু লিখে কলেবর বৃদ্ধি করার প্রয়োজন নাই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে।
প্রত্যাশা রইল অবশ্যই কোন দিন যেন তাঁর রেখে যাওয়া নির্বাচিত ছবির পাণ্ডুলিপি প্রকাশিত হয় এবং তাঁর বিদেহী আত্মা শান্তির পরশ পায় এবং বিশ্ব আলোকচিত্র ইতিহাসে এই মহাপ্রাণ আলোকচিত্রী যেন অমর হয়ে থাকেন তাঁর সৃজনশীল কর্ম দক্ষতা ও চিন্তা চেতণায়।
স্বপন সাহা, ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার ।
Leave a Reply