নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ
নতুন স্বপ্ন নিয়ে মহান বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে আজ। বিগত ৫ই আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর অন্তবর্তী সরকারের অধীনে প্রথম পালিত হচ্ছে মহান বিজয় দিবস। আওয়ামী সরকারের দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটতরাজসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে সাধারণ জনতার প্রতিরোধের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তারা।
নতুন স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হয়ে দেশকে নিয়ে যাবে অনন্য এক উচ্চতায়, সেই স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে এবার পালন করা হচ্ছে মহান বিজয় দিবস।
দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিকেল ৪ টা ২১ মিনিটে পাক হানাদার বাহিনী রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজী আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন । সৃষ্টি হয় বাংলাদেশ নামক নতুন রাষ্ট্রের, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ,স্বপ্নের নতুন পতাকার।
একাত্তরের ২৬শে মার্চের কাল রাতে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী এদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়ে যে যুদ্ধ শুরু করে, দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশের মুক্তিকামী নানা শ্রেণী পেশার মানুষ অস্ত্র হাতে ঝাপিয়ে পড়েছিল দেশ মাতৃকাকে রক্ষার জন্য। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলো মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ। সেই সব অকুতোভয় বীরসেনানীদের আত্মত্যাগ ও নাম না জানা মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই স্বাধীনতা।
আর সেই সব শহীদ বীরযোদ্ধাদের স্মরণ করতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সাভারের নবীনগরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ফুল দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করবেন।
এই উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রং তুলির আঁচড়ে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে, নেওয়া হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে পুরো স্মৃতিশৌধ এলাকা।
মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও আশপাশের এলাকায় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এ কে এম আওলাদ হোসেন। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। ডিআইজি সাংবাদিকদের আরও জানান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা শুধু স্মৃতিসৌধ কেন্দ্রীক নয়, আশেপাশের যে জেলাগুলো আছে অর্থাৎ মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও গাজীপুর মেট্রো এলাকাও নিরাপত্তা বলয়ে চলে আসবে।
তিনি আরও জানান, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রায় ২৩ কিলোমিটার মহাসড়কে ১১টি সেক্টরের মাধ্যমে তিন হাজার পুলিশের ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সার্বিক সময় সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হবে। পুলিশ, র্যাব ট্রাফিকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্মৃতিসৌধের ভেতর ও বাহিরে সতর্ক অবস্থায় থাকবে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হবে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা।
মহান বিজয় দিবস-২০২৪ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে । আজ ভোরে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।
বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
বিজয় দিবস পালন উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাধারণ মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠবে। বিজয়ের ৫৪ বছরে আমরা যখন নানা প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসাব মিলাতে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ি, কিন্তু ডিসেম্বরের বিজয় দিবসে আমরা সকলেই আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক জাতীয় স্মৃতিসৌধে আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করতে সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে ফুল দিয়ে তাদেরকে স্মরণ করি সশ্রদ্ধ চিত্তে।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরের বিজয় দিবস উদযাপন অনেক তাৎপর্য বহন করছে।
উল্লেখ্য ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে নবীনগরে এই স্মৃতিসৌধের শিলান্যাস করেন। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং নকশা আহবান করা হয়। ১৯৭৮-এর জুন মাসে প্রাপ্ত ৫৭টি নকশার মধ্যে সৈয়দ মাইনুল হোসেন প্রণীত নকশাটি গৃহীত হয়। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মূল স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে বিজয় দিবসের অল্প পূর্বে সমাপ্ত হয়।
Leave a Reply